গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়প্রিয় পাঠক, আপনি কি ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি এখন সঠিক জায়গাতেই রয়েছেন। কারণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরবো। তাই জানার জন্য শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকেন তাহলে ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত হলে ভালো, ক্রিয়েটিনিন আসলেই কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ, ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঔষধ, ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে এবং ক্রিয়েটিনিন কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ
ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত হলে ভালো
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত হলে ভালো। কেননা আমরা যদি না জানি বর্তমানে আমার শরীরের যে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা রয়েছে এটি আমার জন্য ভালো কিনা। যদি এটি আমার জন্য ভালো হয়ে থাকে তাহলে তো উপকারের ডায়ালাইসিস করার দরকার নেই। তাই চলুন আমরা জেনে নেই এখন আমাদের শরীরে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কত হলে আমাদের জন্য ভালো।
সাধারণত রক্তের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা নির্ভর করে থাকে বয়স, জাতি, লিঙ্গ এবং শরীরের আকারের ওপর। তাই বিভিন্ন বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে শরীরে ক্রিয়েটিনিন মাত্রা আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। নিম্নে বয়স ভেদে ক্রিয়েটিনিন এর জন্য সাধারণ মাত্রাগুলো নির্ধারণ করা হলো।
- নবজাতকদের জন্য (যাদের বয়স ১৬ বছর) সাধারণ ক্রিয়েটিনিন লেভেলের মাত্রা হলো 0.2 অথবা তার বেশি
- মেয়েদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ১৬ বছর অথবা তার বেশি হয় তাদের শরীরের সাধারণ ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা হলো 0.৬-1.1 mg/dL
- পুরুষ মানুষের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ১৬ বছর অথবা তার বেশি তাদের শরীরের সাধারণ ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা হলো 0.৪-1.3 mg/dL
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় অথবা আদৌ আমাদের শরীরে ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন আছে কিনা সেই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন আপনি যদি এই সম্পর্কে না জেনে থাকেন চলুন জেনে নেওয়া যাক। ইন্ডিয়ার এক ডাক্তার যার নাম হল পতিন সেন গুপ্ত তিনি বলেছেন আমরা এমন অনেকেই রয়েছে যারা আমাদের শরীরে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেই চিন্তিত হয়ে পড়ে যে ডায়ালাইসিস করতে হবে।
আসলে ডায়ালাইসিস অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে করা হয়। মনে করুন আপনি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মাধ্যমে জানতে পারলেন আপনার ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ১.২ হয়েছে। এখন আপনাকে অনেকেই বলবে যে আপনার কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপনাকে অবশ্যই ডায়ালাইসিস করাতে হবে। আর এমন কথা শুনে আপনার মন খারাপ হয়ে যাবে। আর মন খারাপ হওয়ার কথা তো স্বাভাবিক।
তবে আপনি এই কথা শুনে মন খারাপ না করে সরাসরি আপনি গিয়ে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এর কারণ হলো একজন ভালো ডাক্তার অনেকগুলো চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মাধ্যমে তারপরে ফাইনালাইজ হয়ে জানায় যে আপনার ডায়ালাইসিস করতে হবে কিনা। তিনি আপনাদের সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক পরামর্শ প্রদান করবেন। এর পাশাপাশি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও তিনি সহযোগিতা করবেন।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের হাত পা কাপে কে
সাধারণত যাদের ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা থাকে তারা মূলত রক্তশূন্যতায় ভোগে। এছাড়াও পোশাক করার মাধ্যমে শরীর থেকে কতটুকু পরিমাণ প্রোটিনের পরিমাণ বের হচ্ছে এটি নির্ণয় করার মাধ্যমেও বোঝা যায় কিডনি কতটুকু খারাপ হয়েছে। যখন আমাদের শরীরে ক্রিয়েটিনিন দেখা দেয় তখন আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ নির্গত হতে থাকে। যেটা আমাদের কিডনি থেকে ফিল্টার করার মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে এবং ঘামের সাথে শরীর থেকে বের করে দেয়।
আর ডায়ালাইসিস চিকিৎসা হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে কিডনি যখন তার কাজগুলো সঠিকভাবে করতে না পারে এবং আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায় তখন এই ডায়ালিসিস চিকিৎসা করতে হয়। এই ডায়ালাইসিস চিকিৎসা করার জন্য এর পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। সেগুলো হল
- শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ০২ মিলিগ্রাম হলে তারপরে ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন হয়।
- বয়স্ক মানুষজনের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ৫.০ মিলিগ্রাম হলে তারপরে ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন পরে।
তবে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিং এর উপর নির্ভর করে যে ডায়ালাইসিস করতে হয় বিষয়টি এমন নয়। ডায়ালাইসিস চিকিৎসা পদ্ধতি তখনি সবথেকে বেশি পরিমাণে জোর দিয়ে করার প্রয়োজন পড়ে যখন আমাদের শরীরের কিডনির ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম অথবা তার বেশি হয়। এছাড়াও GFR এর পরিমাণ 30 মিলিলিটার অথবা তার কম যদি হয় তারপরে আমাদের ডায়ালাইসিস চিকিৎসা পদ্ধতিটি করা হয়।
এছাড়াও যখন কিডনি তার কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তার সকল কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারেনা সেই সময়ে ডায়ালাইসিস করার মাধ্যমে কিডনির ভেতরে একটি কৃত্রিম ঢাকনি বসিয়ে দেওয়া হয়। যাতে করে সে তার কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারে। আশা করছি আপনি এখন বুঝতে পেরে গেছেন আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কত হলে আপনাকে ডায়ালাইসিস করতে হবে।
ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়
আমরা সকলেই এখন ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই সম্পর্কে জানি। আসুন এবার আমরা জেনে নেই ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় সম্পর্কে। কেননা আমাদের শরীরে যদি ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায় তাহলে এটি আমাদের শরীরের উপরে বাজে প্রভাব ফেলে। আর সেজন্যই সকল ডাক্তারগণই তার রোগীদেরকে বলে থাকেন ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য।
শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ডায়েট করার মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিভাবে আপনি ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কমাবেন সে সম্পর্কে আমরা এখন জানবো। যেটি খুব সহজে কমানো সম্ভব। তাই চলুন আর বেশি দেরি না করে ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ক্রিয়েটিনযুক্ত সম্পূরক খাদ্য এড়িয়ে চলুনঃ আমাদের শরীরে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা স্বাভাবিক হাড়েই বৃদ্ধি পায়। যার জন্য আমাদের যেই সকল খাবার থেকে ক্রিয়েটিনিন বেশি শরীরে সংগ্রহ হয় সেটি অতিরিক্ত করে গ্রহণ না করাই উত্তম। তাই আপনারা যারা শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কমাতে ইচ্ছুক তারা অতিরিক্ত করে ক্রিয়েটিনিনি যুক্ত খাবার গ্রহণ না করাই উত্তম।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণঃ যারা শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা আরো অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। কারণ এর জন্য যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তাদের জন্য অনেকটাই বেশি উপকার হবে। এছাড়াও গোটা শস্য হিসেবে টাটকা ফলমূল, শাকসবজি, লেবু এই জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক
প্রোটিন জাতীয় খাবার কম পরিমাণে গ্রহণ করুনঃ আমরা অতিরিক্ত প্রটিন সমৃদ্ধ খাবার খাই তাদেরকে সর্বদা চেষ্টা করতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত খাবার না খাওয়া। যেটি আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে আমরা যারা লাল মাংস খেতে অভ্যস্ত তাদেরকে আগে পরিহার করতে হবে। কেননা লাল মাংস আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে।
এছাড়াও এর আরো বেশ কিছু উৎস রয়েছে। যেমন হাস অথবা মুরগির ডিম, দুগ্ধজাতীয় পণ্যও আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও উদ্ভিদভিত্তিক স্লাইজ করা এবং কম পরিমাণে প্রটিন গ্রহণ করাও আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ কমানোর জন্য উপকারি।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার প্রতিদিন নিয়মিত পান করুন। আর এটি আপনি প্রতিদিন পান করার জন্য এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে কিছুটা পরিমাণ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে রেখে তারপরে পান করুন।
- প্রতিদিন নিয়মিত নূন্যতম একটুকরো পরিমাণ দারুচিনি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- লবণ নিয়মিত পরিমাণমতো খান। অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- রেড মিটের অন্তর্ভুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যেমন গরু, খাসি অথবা মসিষের মাংস।
- আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার করছেন তাও আবার নিয়মিত। তারা অবশ্যই এই ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার বন্ধ করুন।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- আপনি যেই পরিমাণ প্রতিদিন প্ররিশ্রম করেন ঠিক ওই পরিমাণই প্ররিশ্রম করুন। অতিরিক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।
- নিয়মিত প্রতিদিন ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামযুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে।
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ রয়েছে বেশ কিছু। যখন আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে যায় তখন এর জন্য কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। আপনি যদি এমন কিছু লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই চলুন আমরা এখন জেনে নেই আপনার কোন কোন লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে আপনি বুঝবেন আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বুঝতে পারবেন।
- খুবই ঘন ঘন পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া।
- প্রস্রাব করার সময়ে ব্যাথা অনুভব করা
- খাবার খেতে স্বাদ উঠে যাওয়া
- পা অতিরিক্ত পরিমাণে ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়া
- খাবার খাওয়ার রুচি অনেকটাই কমে যাওয়া
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- যখন প্রস্রাব হয় তখন অতিরিক্ত পরিমাণে ফেনা হওয়া
- শরীরের চুলকানি হওয়া
- শরীরের হৃদস্পন্দন বেশি হয়ে যাওয়া
- ক্ষুধামন্দার সৃষ্টি হওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া অথবা বমি হওয়া
- শরীর ঠান্ডা হয়ে আসা
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
আরো পড়ুনঃ ঘুমের ঔষধের নাম ও ছবি
এই সকল কিছু ছিলো ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। উপরের লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে বুঝে নিবেন আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন আপনি বুঝতে পারবেন তখন অবশ্যই নিজের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হবে। এর পাশাপাশি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে
আমরা সকলেই এখন জানি যে ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়। তবে আপনি জানেন কি কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে? যেই সকল খাবার খাওয়ার ফলে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় সেই সকল খাবার গ্রহণ করা আমরা যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত রয়েছি তাদের ক্ষেত্রে গ্রহণ করার কোনভাবেই উচিত হবে না। তাহলে চলুন আমরা এখন জেনে নেই কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে সেই সম্পর্কে।
প্রটিন জাতীয় খাবারঃ আমরা এমন অনেকেই আছি যখন আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ধরা পরে তখন আমরা একেবারেই প্রটিন জাতীয় সকল ধরণের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেই। যেটি কনভাবেই উচিত নয়। তাই আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের কিডনি সম্পর্কে সমস্যাগুলো বুঝার পরে তারপরে খাবার খাওয়া বন্ধ করা উচিত। আর এই কার্যক্ষমতা কতটুকু রয়েছে সেটি নির্ণয় করার যায় যখন রক্ত পরিক্ষা করা হয় তখন।
যখন আমাদের রক্তে GFR এর মান ৬০ এর কম হবে তখন আমাদের দিনে ০.৮/কেজি হারে প্রটিনজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। যার অর্থ দাঁড়ায় একজন ৬০ কেজি ওজনের মানুষ প্রতিদিন ৪৮ গ্রাম পর্যন্ত প্রটিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও এখানে উল্লেখ্য বিষয় হলো যদি কারো কিডনির সমস্যা দেখা দেয় তাহলেও সেই ব্যাক্তি দিনে ১টি ডিম, রাতে এবং দুপুরে ২ টুকরো করে মাছ কিংবা মাংস এবং ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ ডাল খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে গরু, মহিষ অথবা খাসির মাংস পরিহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ পালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
ফল ও শাকসবজিঃ আমরা অনেকেই হয়তো অনেকের কাছে এমনটি শুনে থাকবো যে যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তাদের কোন প্রকারের ফলমূল অথবা শাকসবজি খাওয়া নিষেধ। তবে আপনি জানলে অবাক হবেন এটি কথাটা মোটেও সত্য নয়। কেননা যদি কারো রক্তে GFR এর মান ৩০ এর কম হয়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। আর সেই সকল ফল বা সবজিগুলো হলো
- কলা
- শসা
- পালংশাক
- খেজুর
- টমেটো
- আলু
- ডাবের পানি
- ফলের রস
- শুকনা ফল
এছাড়াও যেই সকল খাবারে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায় সেই সকল খাবার আপনি চাইলে খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই পরিমাণমতো খেতে হবে। এই সকল পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো
- আম
- জাম
- আপেল
- পেয়ারা
- আঙুর
- তরমুজ
- নাশপাতি
এছাড়াও আপনি যদি ক্রিয়েটিনিন রোগে আক্রান্ত থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। এছাড়াও যদি আপনার রক্তে GFR এর মান ৬০ এর অনেকটাই কম হয়ে থাকে তাহলে দিনে ১ কেজির বেশি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত হবে না। আর যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে প্রতি ৬ মাস পর পর আপনার রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এবং ভিটামিন-ডি এর পরিমাণ পরিক্ষা করার পরে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। তারপরে তিনি যেইভাবে পরামর্শ দিবেন সেটি মেনে চলতে হবে।
ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঔষধ
ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে। এর মধ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক ধরণের ঔষধ রয়েছে। যেগুলো ব্যাবহার করার মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত অনেকটাই সুস্থ্য হয়ে যাবেন। তবে একটি কথা না বললেই নয় আপনি যদি আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কমাতে চান তাহলে এর পূর্বে অবশ্যই আপনাএক জেনে নিতে হবে আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন কোন কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্রিয়েটিনিন মাত্রা বুঝে ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেটি আপনাকে আগে জানতে হবে। যদি অত্যাধি মাত্রায় হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হবে। এখন যদি আপনি বুঝতে পারেন আপনার শরীরের ইলেকট্রলাইট কম অথবা বেশি হওয়ার জন্য আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কম বেশি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভালো করে চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়াও আপনি চাইলে নিম্নের ঔষধগুলো সেবন করতে পারেন।
- কিডনির সোডিয়ামের স্বপ্লতার কারণে Sodisalt Tablet খেতে পারেন।
- যদি প্রতিদিন প্রস্রাবের পরিমাণ অনেকটাই কম হয়ে থাকে অথবা আটকে আটকে প্রস্রাব হয় তাহলে এর জন্য Frulac 20mg খেতে পারেন।
- কিডনির পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য যদি ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে Dicaltrol 0.25mg ঔষধটি প্রতিদিন রাতে ১টি করে সেবন করতে পারেন।
- যদি কিডনিতে ইউরিক এসিড এর পরিমাণ বেশি হয় তাহলে Febus 40mg ঔষধটি খেতে পারেন।
- যদি আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে যায় তাহলে আপনি Ceftriaxone 1 gm Injuction প্রতিদিন ১টি করে ৭ দিন শরীরের শিরা পথে নিতে পারেন।
উপরের উল্লিখিত সকল ধরণের ঔষধগুলো ছিলো ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঔষধ। আপনার শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য এই সকল ঔষধ ব্যাবহার করতে পারেন। তবে সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করার পরে এই সকল ঔষধগুলো সেবন করেন।
ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে
আমরা তো সকলেই এখন ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটি ক্লিয়ার ধারণা জানি। তবে এর পাশাপাশি আমাদের ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে সেই সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। কেননা এর কারণ যদি আমরা আগে থেকেই জেনে থাকতে পারি তাহলে এটি আমরা পূর্বে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। তাই চলুন এখন আমরা এই সম্পর্কে জেনে নেই।
যখন আমাদের কিডনিতে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দেয় তখন আমাদের কিডনি তার সকল স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো বন্ধ করে দেয়। আর এর জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত কিডনির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। যার জন্য রক্ত থেকে আর ক্রিয়েটিনিন আলাদা হতে পারে না। আর এর জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রিয়েটিনিন আমাদের রক্তের মধ্যেই থেকে যায়। আর এর ফলেই আমাদের শরীরের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায়।
আবার এই সংঙ্গা অন্যভাবে এই ভাবে বলা যায় যে, আমাদের শরীরের মাংস পেশির ফসফেট ভাঙ্গার ফলে আমাদের শরীরে ক্রিয়েটিনিন তৈরি হয়। তবে এটি আমাদের মাংস পেশির ভর এবং ঘনত্বে মাত্রার ওপরে নির্ভর করে। যখন মানব দেহে কিডনি ঠিকঠাক কাজ করতে ব্যাহত হয় ঠিক তখনই মানবদেহে অতিরিক্ত ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যেটা অবশ্যই আমাদের বুঝা উচিত।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্নঃ প্রস্রাবে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত মিলিগ্রাম ডিএল?
উত্তরঃ প্রস্রাবে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো পুরুষ মানুষের জন্য ০-৭-১. ৩ এমজি/ডিএল এবং মহিলাদের জন্য ০.৬-১.১ এমজি/ডিএল।
প্রশ্নঃ কিডনির সমস্যা হলে কি লক্ষণ দেখা দেয়?
উত্তরঃ কিডনির সমস্যা হলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেগুলো হলো
- প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া
- চোখের চারিপাশ ফোলা দেখতে পাওয়া
- নিজেকে অনেক বেশি পরিমাণে ক্লান্ত মনে হওয়া
- পা অথবা পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া
- মাংস পেশিতে টান লাগা
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
প্রশ্নঃ বয়স অনুযায়ী ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত?
উত্তরঃ বয়স অনুযায়ী ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা নিম্নে উল্লেখ করা হলো
- ১৮ বছর বয়স থেকে ৪১ বছর পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ০.৬-১.২
- ৪১ বছর বয়স থেকে ৬১ বছর পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ০.৬-১.৩
- ৬১ বছর বয়স থেকে তার উর্ধে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ০.৭-১.৩
প্রশ্নঃ রক্তে ক্রিয়েটিনিন কত হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়?
উত্তরঃ রক্তে যদি ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা শিশুদের ক্ষেত্রে 2.0-এর বেশি হয় এবং একজন প্রাপ্ত বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে 5.0 এর বেশি হয় তাহলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়।
প্রশ্নঃ কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয়?
উত্তরঃ যদি আপনি দেখেন আপনার কিডনিতে GFR ওর মান ৯০ এর বেশি রয়েছে তাহলে বুঝবেন এটি স্বাভাবিক রয়েছে। আর যখন দেখতে পাবেন কিডনিতে GFR ওর মান ৬০ এর কম রয়েছে তাহলে বুঝে নিবেন আপনার কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। তাই এই সময়ে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে একজন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত হবে।
শেষ কথা
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এই সম্পর্কে আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের প্রধান আলোচনার বিষয় ছিলো। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এমনই আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল প্রতিদিন নিয়মিত পড়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
Post a Comment