পোল্যান্ড কাজের বেতন কতপ্রিয় পাঠক, আপনি কি বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। কেননা আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাবেন এবং কিভাবে আবেদন করবেন সেই সকল বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেছি। তাই জানার জন্য অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
যদি আপনি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তাহলে পোল্যান্ড ভিসা আবেদন করার নিয়ম, বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার নিয়ম, পোল্যান্ডে কাজের বেতন কত? পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে, পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কি কি কাজ পাওয়া যায় এবং পোল্যান্ড ভিসা এজেন্সির নামগুলো জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ
- বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
- পোল্যান্ড ভিসা আবেদন করার নিয়ম
- বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার নিয়ম
- পোল্যান্ডে কাজের বেতন কত?
- পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে
- পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কি কি কাজ পাওয়া যায়
- পোল্যান্ড ভিসা এজেন্সি
- FAQ । পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা
- শেষ কথা
বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যেতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা আপনি যদি না জেনে থাকেন কিভাবে আপনি পোল্যান্ডের ভিসা পাবেন তাহলে আপনি আপনি সেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আর নাহলে আপনি দালাল চক্রের হাতে পরবেন। যেটা আপনার জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আপনি যখন পোল্যান্ডে কাজের ভিসার জন্য যেতে চাইবেন তখন আপনাকে অবশ্যই পোল্যান্ডের কোম্পানির কাছ থেকে কাজের ওভার নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখি আপনার যদি কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে আপনি পোল্যান্ডে যে কোন ভিসার মাধ্যমে গিয়ে সেখানে ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তাই পোল্যান্ডের কাজের ভিসা পাওয়ার পূর্বে আপনাকে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হবে।
আপনি যদি পোল্যান্ডের একটি পোলিশ কোম্পানির কাছে থেকে চাকরির অফার পান তাহলে আপনি সেই কোম্পানির কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর সেজন্য পোল্যান্ডের কোম্পানি তাদের দেশ থেকে বাহিরের বিভিন্ন দেশ হতে কাজের ক্ষেত্রে লোক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আমরা সকলেই জানি যে নিজের দেশ ছেড়ে বাহিরের দেশে যাওয়ার জন্য একটি অনুমতি পত্রের প্রয়োজন হয়। যেটাকে আমরা বাংলা ভাষায় পাসপোর্ট বলে থাকি।
তবে আপনি যদি পোল্যান্ডে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে চান সেই ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ হতে হবে কমপক্ষে ৯ মাস। সর্বোচ্চ আপনার যতদিন ইচ্ছা আপনি সেই মেয়াদের পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে পারেন। আপনি যখন পোল্যান্ডের কাজের ভিসার জন্য আবেদন করতে চাইবেন তখন আপনাকে নিম্নের উল্লিখিত কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে জমা দিতে হবে। সেগুলো হলো
- একটি বৈধ পাসপোর্ট
- ভিসা আবেদনের কপি
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
- কাজের অনুমতি পত্র
- চাকরির অফার/সার্কুলার লেটার
- কোন কাজের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা থাকলে সেই কাজের অভিজ্ঞতার সনদপত্র
- একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ
- পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি
- নিজের জন্য একটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বীমা
আপনি যখন উপরের সকল ডকুমেন্ট দিয়ে পোল্যান্ড ভিসার জন্য আবেদন করবেন তারপরে আপনাকে সেই ভিসার জন্য একটি ইন্টারভিউতে রাখা হবে। সেখানে আপনাকে যাচাই-বাছাই করা হবে আপনি সেই কাজের জন্য যোগ্য কিনা। আর সেজন্য আপনাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্ন করা হবে আপনার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে এবং পোল্যান্ডে আপনার কাজে যাওয়ার কারণ।
আরো পড়ুনঃ দুবাই কোম্পানি ভিসা বেতন কত
পোল্যান্ড যেহেতু অনেক উন্নতশীল একটি রাষ্ট্র তাই এই রাষ্ট্রের ভিসার জন্য সকল তথ্যগুলো সাবমিট করার পরেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে আপনি যদি সকল কাগজপত্র গুলো সঠিকভাবে জমা দিয়ে থাকেন তাহলে আপনি পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য সক্ষম হবেন।
তবে আপনি যখন পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কাজের জন্য আবেদন করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে সেগুলো হলো
- আপনার সকল কাগজপত্র বৈধ হতে হবে এবং সকল তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
- ভিসার জন্য ইন্টারভিউ এর সঠিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
- পোল্যান্ডে কাজ পাওয়া সহজ করার জন্য সেই দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
উপরের উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো যদি আপনি সঠিকভাবে নিতে পারেন তাহলে আপনি খুব সহজেই বাংলাদেশ থেকেও পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কাজের জন্য ভিসা পাবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো আপনি যেন কোনভাবেই দালাল চক্রের হাতে না পরেন। তাহলে ভিসা পাওয়া আপনার জন্য সহজ হলেও সেখানে কাজ পাওয়া আপনার জন্য সহজ হবে না।
পোল্যান্ড ভিসা আবেদন করার নিয়ম
ইতিপূর্বে আমরা সকলেই বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাবেন সেই সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো পোল্যান্ড ভিসা আবেদন কিভাবে করতে হয়। আপনি যদি পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে সেখানে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কিভাবে আবেদন করবেন চলুন সেটি এখন আমরা দেখে নেই।
পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কাজের জন্য সেখানে বিভিন্ন কোম্পানি কাজের সার্কুলার দিয়ে থাকে। আপনি সেই সকল কোম্পানির খুঁজে খুঁজে আবেদন করতে পারেন। অথবা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের পোল্যান্ডের কাজের ভিসার জন্য অনেক ধরনের এজেন্সি রয়েছে। সেই এজেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ করে আপনি পোল্যান্ড এ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে পারেন।
এজন্য এজেন্সির কাছে যখন আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে সিভি জমা দিবেন তখন তারা খুঁজে খুঁজে পোল্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানিতে আপনার সিভি সেন্ড করবে। এখানে কথা হল আপনি কোন ভিসার জন্য নিজে আবেদন না করলেও এই সকল এজেন্সি গুলো আপনার হয়ে কাজের জন্য আবেদন করে দেবে। পোল্যান্ডের কোম্পানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ক্ষেত্রে সিভি জমা দিলে যদি কোন কোম্পানির আপনার সিভি দেখে পছন্দ হয় তাহলে সেই কোম্পানির সরাসরি এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করবে।
আর সেই এজেন্সি এসে তখন আপনাকে জানাবে। এরপরে পোল্যান্ডের সেই কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট সময় দিবে। সেই নির্দিষ্ট সময়ে তারা আপনার সাথে ভিডিও কলে যোগাযোগ করবে। আর এটাই হলো মূলত আপনার ইন্টারভিউ। যখন আপনার এই ইন্টারভিউ সেশন শেষ হয়ে যাবে তখন সেই কোম্পানি আপনার সিভি পোল্যান্ডের Solicitor or Attorney কে জমা দিবে।
তখন সেই Attorney আপনার কাজের জন্য আপনার সিভির বিপরীতে লেভার মিনিস্ট্রি অফিস থেকে আপনার কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসবে। আপনি যখন পোল্যান্ডের লং টাইম ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসার জন্য যেতে চাইবেন তখন আপনাকে Poland Ministry of Affairs এই ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে এখন কোন তেমন এম্বাসি করে না ওঠার কারণে Poland Embassy, New Delhi থেকে আপনাকে আবেদন করতে হবে। আপনি যখন পোল্যান্ডের এম্বাসির দিল্লির ভিসার জন্য আবেদন করবেন তখন আপনাকে একটি ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে। সেই ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য এখানে ক্লিক করুন। এই ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনে সকল ডকুমেন্ট পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। এবং আপনি যেই ডকুমেন্টগুলো পূরণ করবেন সেই ডকুমেন্টের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডকুমেন্টের কপি জমা দিতে হবে।
এছাড়াও পোল্যান্ডের জন্য একটি বিশ্বস্ত এবং অনেক জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইটের নাম হলো ম্যানপাওয়ার কোম্পানি। আপনারা এই কোম্পানিতে নিজের সিভি সেন্ড করে দেখতে পারেন। এই কোম্পানির ভিসার সাকসেস রেটও অনেক ভালো। তাই আপনি চাইলে এই কোম্পানিতে ভিসার জন্য আবেদন করে দেখতে পারেন। যদি আল্লাহ আপনার সহায় হোন এবং আপনার ভাগ্য যদি ভালো থাকে তাহলে আপনি এখান থেকে পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেয়ে যেতে পারেন।
এই কোম্পানি আপনার ভিসার জন্য কখনোই আগে থেকে টাকা চাইবে না। তবে আপনার কাছে থেকে চলি টাকা চেয়ে থাকে তবে আপনি সেই কোম্পানিতে টাকা দিবেন কিনা সেটা আপনার বিষয়। যদি এই কোম্পানির সাথে টাকা-পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ঝামেলা হয়ে থাকে তাহলে আমরা কোনভাবেই দায়ী নই। তাই আপনি যদি পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাবেন এবং কিভাবে এই ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেই সম্পর্কে আমরা সকলেই ইতিপূর্বে জেনেছি। এখন আমরা জানবো বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার নিয়ম। অর্থাৎ আপনি কোন নিয়ম অনুসরন করার মাধ্যমে পোল্যান্ড যেতে পারবেন সেই সম্পর্কে জানবো। তাই চলুন আর বেশি দেরি না করে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
আপনি যদি পোল্যান্ডে যেতে চান তাহলে সবার প্রথমে যেটি প্রয়োজন হবে সেটি হল একটি ভিসার। সেই ভিসা যে কোন ভিসা হতে পারে। সেটি হতে পারে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, সেটি হতে পারে স্টুডেন্ট ভিসা অথবা সেটি হতে পারে ভ্রমণ ভিসা। যে কোন একটি ভিসার মাধ্যমে আপনি পোল্যান্ড যেতে পারবেন। কোন প্রকার ভিসা ছাড়া আপনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে গমন করতে পারবেন না।
তবে এই ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র দিয়ে পোল্যান্ডের সরকারি এজেন্সির কাছে থেকে ভিসা নিতে হবে। পোল্যান্ডের এজেন্সির কাছে থেকে অথবা পোল্যান্ডের ভিসা নেওয়ার জন্য যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- একটি বৈধ পাসপোর্ট যার মেয়াদ কমপক্ষে ৯ মাস অথবা ১ বছর থাকতে হবে।
- বাংলাদেশের পাসপোর্টের ফটোকপি।
- সাম্প্রতিক সময়ে তোলা আপনার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আপনার যে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেই ব্যাংক একাউন্টের ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
- একটি ভিসার জন্য কমপক্ষে ৭০ ইউরো পরিমাণ ফি জমা দিতে হবে।
- আপনি যদি পোল্যান্ডে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে যেতে চান তাহলে আপনার সেই ভিসার জন্য পোল্যান্ডের হোটেলের বুকিং এর তথ্য জমা দিতে হবে।
- যদি কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ওয়ার্ক পারমিটের সকল তথ্য জমা দিতে হবে।
- আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় পোল্যান্ড যেতে চান তাহলে পোল্যান্ডের যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণপত্রের সকল তথ্য জমা দিতে হবে।
- নিজের জন্য অবশ্যই সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকার একটি স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে।
উপরের উল্লেখিত দেখানোর নিয়ম অনুসারে আপনি পোল্যান্ড যেতে পারবেন। এছাড়াও আপনি যদি পোল্যান্ডের শুধুমাত্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে আপনাকে নিম্নের পদক্ষেপ গুলো নিতে হবে। চলুন তাহলে সেই সকল পদক্ষেপ গুলো জেনে নেওয়া যাক।
একটি ভ্রমণ বীমাঃ আপনি যখন পোল্যান্ড যেতে চাইবেন তখন অবশ্যই আপনার উচিত হবে একটি ভ্রমণ বীমা করার। এর কারণ হলো আপনি সেখানে যাওয়ার পরে আপনার সাথে যেকোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে আপনার ভ্রমণ বাতিল হয়ে যাওয়া, আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হারিয়ে যাওয়া।
নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করাঃ আপনি যদি পোল্যান্ডে যেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে শারীরিক দিক থেকে সুস্থ হতে হবে। আর সেজন্য আপনি মেডিকেল চেকআপ করিয়ে নিতে পারেন।
পাসপোর্ট এর বৈধতা পরীক্ষা করুনঃ আপনি যখন একটি পাসপোর্ট করবেন তখন তারপরে অবশ্যই আপনাকে এটি চেক করে নিতে হবে যে আপনি পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার পরেও অন্তত ছয় মাসের জন্য বৈধ থাকবে।
ফ্লাইট বুকিংঃ বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে একটি ফ্লাইট বুকিং করতে হবে। সেজন্য পোল্যান্ডের প্রধান কিছু বিমান বন্ধর এর মধ্যে রয়েছে ওয়ারশ চোপিন বিমানবন্দর, ক্রাকো জনোপল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং গডানস্ক লেচ ওয়ালেসা বিমানবন্দর
ভিসা নিশ্চিত করুনঃ আপনি যদি পোল্যান্ডে ভ্রমণের উদ্দেশ্যেও যেতে চান তাহলে আপনাকে সেই দেশের জন্য একটি ভিসা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য আপনি বাংলাদেশ থেকে পোলিশ দূতাবাস অথবা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
পোল্যান্ডে কাজের বেতন কত?
বাংলাদেশ থেকে যখন আপনি বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে পোল্যান্ডে যেতে চাইবেন তখন আপনার মাথায় একটি বিষয় ঘুরপাক খাবে সেটি হল পোল্যান্ডে আপনি যে কাজ করবেন সেই কাজের বেতন কত টাকা দেওয়া হয়। আপনি যদি এমন কাজের জন্য যেতে চান তাহলে আপনার এই বিষয়ে পোল্যান্ড যাওয়ার পূর্বেই জেনে নেওয়া উচিত। তাই আপনারা যারা জানেন না তাদের জন্য এই অংশটুকু অনেক তথ্যবহুল হতে চলেছে।
পোল্যান্ডে আপনি গিয়ে যে কাজ করবেন আপনার সেই কাজের উপরে নির্ভর করে মূলত আপনার বেতন। এছাড়াও কাজের ক্ষেত্রে বেতন নির্ভর করে থাকে আপনি কাজের প্রতি কেমন অভিজ্ঞ এবং আপনার সেই কাজের প্রতি কতটুকু দক্ষতা রয়েছে। আপনার যদি সেই কাজের প্রতি পূর্ব থেকে দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে আপনি অনেক ভাল পরিমানে বেতন পাবেন। যদি আপনি কাজের ক্ষেত্রে নতুন হন তাহলে প্রথম অবস্থায় আপনার বেতন কিছুটা কম হবে।
তবে সাধারণভাবে বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডে কাজের বেতন অনেক বেশি। পোল্যান্ডে বর্তমান সময়ে সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয়ে থাকে ৩,৪৯০ জলোটি। যেটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা। এই সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয়ে থাকে পোল্যান্ডে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদের, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এবং যারা কাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দক্ষ তাদেরকে। তবে আপনি যদি এমন কোন কাজ জেনে থাকেন যে কাজে অনেক বেশি দক্ষ তাহলে সে ক্ষেত্রে বেতন আরো অনেক বেশি।
আরো পড়ুনঃ ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে পোল্যান্ডে একজন ডাক্তারের বেতন ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ জলোটি পর্যন্ত। যেটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা উর্ধে। তবে এই সকল বেতন গুলো মাসিক ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। এই উল্লিখিত বেতন ছাড়াও পোল্যান্ডে যারা কাজের জন্য যায় তাদেরকে আরও বেশ কিছু ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে
চাকরির আইনি নিরাপত্তাঃ পোল্যান্ডে যারা চাকরির জন্য যান তাদের ক্ষেত্রে চাকরির জন্য একটি আইনি নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে।
বোনাস সুবিধাঃ পোল্যান্ডের কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বোনাসের সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। যেমনটি আমাদের দেশে ঈদে এবং বিভিন্ন ধরনের উৎসবে দেওয়া হয়ে থাকে।
শিক্ষার সুবিধাঃ যে সকল কর্মচারীরা পোল্যান্ডে দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তাদের ক্ষেত্রেও শিক্ষার সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।
নির্দিষ্ট একটি ছুটিঃ পোল্যান্ডে যে সকল কর্মচারীগণ কাজ করেন তাদের কাজের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বার্ষিক ছুটি এবং যদি সেই কর্মচারী অসুস্থ হয়ে যায় সেই অসুস্থের জন্য ছুটি এছাড়াও আরো অনেক ধরনের ছুটির সুবিধা তো রয়েছেই।
পেনশন সুবিধাঃ আমাদের দেশের সরকারি কর্মচারীদের যেমন চাকরির মেয়াদ শেষে একটি পেনশনের সুবিধা দেওয়া হয় ঠিক তেমনি পোল্যান্ডের কাজের ক্ষেত্রেও পেনশনের একটি সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্য বীমাঃ পোল্যান্ডে যখন কোন কর্মচারী যায় কাজের জন্য তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে একটি স্বাস্থ্য বীমা প্রদান করা হয়ে থাকে। যেটি তার জন্য অনেক বেশি একটি হেল্পফুল।
উপরের উল্লেখিত পোল্যান্ডের কর্মচারীদের জন্য এই সকল সুবিধা ছাড়াও আরো বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। যেগুলো যদি আপনি পোল্যান্ডের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তাহলে সেখান থেকে জানতে পারবেন। আশা করছি আপনাকে সম্পূর্ণ বিষয়ে ভালোভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে এই সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। তাই আপনি যদি পোল্যান্ড যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে খরচের কথা ও মাথায় আনতে হবে। যদি আপনার সেই খরচ বহন করার সামর্থ থেকে থাকে তাহলে আপনি পোল্যান্ড যেতে পারেন। তাই চলুন এখন আমরা সকলেই জেনে নেই পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে।
পোল্যান্ড যাওয়ার খরচ নির্ভর করে মূলত আপনি কোন ধরনের ভিসা পছন্দ করেছেন এবং আপনার প্রয়োজনীয়তার ওপরে। তবে সাধারণত বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যেতে খরচ হয়ে থাকে ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। উল্লিখিত এই খরচের মধ্যেই রয়েছে আপনার ভিসার ফি, পাসপোর্টের ফি, যাতায়াতের খরচ, থাকা খাওয়ার খরচ এছাড়াও আরো অন্যান্য খরচ।
পোল্যান্ড যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যদি খরচ কমাতে চান তাহলে আপনি নিম্নের দেখানোর পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন।
- যখন আপনি পোল্যান্ডের ভিসার জন্য আবেদন করবেন তখন অবশ্যই দেখেশুনে সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করবেন। এতে করে আপনার কি অনেকটাই কমে যাবে।
- কম টাকার মাধ্যমে টিকেট কিনার ব্যবস্থা করুন। এজন্য আপনি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন ধরনের অফারের দিকে নজর রাখতে পারেন। আর তারা যখন অফার দেয় তখন আপনি সেই সুযোগে ভিসা কিনে নিতে পারেন।
- খাওয়া দাওয়ার জন্য এবং আরো অন্যান্য সকল ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের জন্য আপনি সেখানে স্থানীয় বাজার ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার খরচ অনেকটাই কমে আসবে।
- পোল্যান্ডে যাওয়ার পরে আপনি হোস্টেলে অথবা শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে পারেন। এতে করে আপনার থাকার খরচ কিছুটা হলেও কমে যাবে।
আরো পড়ুনঃ কারো নামে মামলা আছে কিনা জানবেন যেভাবে
উপরের এই উল্লেখিত নির্দেশনাগুলি একটি সম্ভাব্য নির্দেশনা। তবে সেখানে থাকার এবং খাওয়ার খরচ নির্ভর করবে মূলত আপনার উপরে। আপনি কেমন ধরনের খরচ করতে পারবেন এবং আপনি কেমন বাজেট নিয়ে গিয়েছেন সেটার উপরে আপনার নির্ভর করবে কেনাকাটা থাকা এবং খাওয়ার খরচ। আপনার প্রয়োজনীয়তার উপরে নির্ভর করে আপনার পোল্যান্ডে ভ্রমণের জন্য খরচ কম অথবা বেশি হতে পারে।
পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কি কি কাজ পাওয়া যায়
একজন বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার জন্য আগ্রহ সবারই থেকে থাকে। তাই আমরা অনেকেই এমন জিজ্ঞেস করে থাকি পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কি কি কাজ পাওয়া যায়? তাই আপনি যদি পোল্যান্ড কাজের জন্য যেতে চান তাহলে এটি অবশ্যই আপনার জানা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
- কৃষি কাজ
- ওয়্যার হাউজিং এর কাজ
- ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ
- প্যাকেজিঙ্গের কাজ
- বড় গাড়ির ড্রাইভিং এর কাজ
- শো-রুম অথবা রেস্তোরার ক্যাশ কাউন্টারের কাজ
- বাগানের ফল সংগ্রহের কাজ
- কসাই/ব্রুচারের কাজ
- ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজারের কাজ
পোল্যান্ড ভিসা এজেন্সি
বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সংগ্রহ করার জন্য ভিসা এজেন্সির প্রয়োজন হয়। তবে আমরা অনেকেই জানি না আমাদের বাংলাদেশে কোন কোন প্যাল্যান্ডের ভিসার এজেন্সি রয়েছে। যার জন্য আমাদের সেই ভিসার জন্য আবেদন করাও অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়। তাই চলুন এই পর্ব থেকে আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত কিছু ভিসা এজেন্সির নাম জেনে নেই।
পোল্যান্ডের ভিসা পাওয়ার জন্য বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অনেকগুলো ভিসা এজেন্সি রয়েছে। সেই সকল এজেন্সিগুলো আপনাকে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন করা, অ্যাপয়েনমেন্ট বুকিং করা এবং আরো যত সকল আনুসাঙ্গিক কাজ রয়েছে সেগুলো করার জন্য সহযোগিতা করবে। নিম্নে এমন কিছু পোল্যান্ডের ভিসা এজেন্সির নাম উল্লেখ করা হলো।
- Skyways Travels
- Sticker Visa
- Visa Hub
- VisaThing
- OBOKASH
উপরের উল্লখিত এই সকল ভিসা এজেন্সি ছাড়াও আরো বেশ কিছু ভিসার এজেন্সি রয়েছে। যারা আপনাকে পোল্যান্ড যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল ভিসা পেতে সকল ধরণের কাজের জন্য সহযোগিতা করবে। তবে আপনার উচিত হবে এই সকল এজেন্সি সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিয়ে তারপরে তাদের কাছে যাওয়া।
FAQ । বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্নঃ পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট পেতে কতদিন লাগে?
উত্তরঃ যদি পোল্যান্ডের কাজের ভিসার জন্য আবেদনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে ভিসা পেতে সর্বনিম্ন ১২ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
প্রশ্নঃ পোল্যান্ডে চাকরি পাওয়া কি সহজ?
উত্তরঃ পোল্যান্ডে যাওয়ার পরে সেখানে চাকরি পাওয়াটা অনেকটাই সহজ। তবে সেক্ষেত্রে খুব দ্রুত চাকরি পাওয়ার জন্য আপনাকে সেই দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
প্রশ্নঃ পোলিশ ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
উত্তরঃ যদি আপনি পোল্যান্ডের ভিসার জন্য আবেদনের সকল প্রক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করেন এবং সকল কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে জমা দেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার ভিসা পেতে ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সময় সীমা ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত ও হতে পারে।
প্রশ্নঃ ভিসা ছাড়া কতদিন পোল্যান্ডে থাকা যায়?
উত্তরঃ পোল্যান্ড ভ্রমণ ভিসায় গেলে আর যদি আপনার ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং আপনি যদি একজন আদর্শ এবং যোগ্য দর্শনার্থী হন তাহলে আপনি প্রতিটি ১৮০ দিনের ভিসার বিপরীতে ৯০ দিন পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারবেন।
প্রশ্নঃ পোল্যান্ডের মুদ্রার নাম কি?
উত্তরঃ পোল্যান্ডের মুদ্রার নাম হলো জলোটি।
শেষ কথা
বাংলাদেশী জন্য পোল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাবেন এবং সেই ভিসার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন সেই সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বং বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনার কাছে তথ্যগুলো ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। এমনই আরো তথ্য প্রতিদিন নিয়মিত পাওয়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
Post a Comment