খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটিপ্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত আমলকি খেতে ভালোবাসেন তাহলে অবশ্যই আপনার আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত। যদি না জেনে থাকেন তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি আমলকির পুষ্টিগুণ, শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা, খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই জানা উচিত। আমাদের দেহের জন্য আয়ুর্বেদে সবথেকে বেশি ভেষজ উপাদানের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। এর মধ্যে আমলকি অন্যতম। আমলকিতে ভিটামিন সি রয়েছে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন একটি করে আমলকি খান।

অথবা এটি গুঁড়ো করে অথবা আমলকির মোরব্বা, আচার এগুলো খেতে পারেন। কারণ আমলকি অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অনেক উপকারী ভেষজ ফল। তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি।
  • আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে
  • মুখের দাগ দূর করে মুখকে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতে অধিক কার্যকরী।
  • আমাদের লিভার সুস্থ রাখতে আমলকি অধিক পরিমাণ সহায়তা করে থাকে।
  • আমলকির নিয়মিত তুলে ব্যবহারের ফলে চুল পড়া কমে, চুল বড় করে, চুলকে অধিক মজবুত করে
  • আমলকি পুরের খুশকি দূর করে এবং পাকা চুল প্রতিরোধের সহায়তা করে
  • আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য আমলকি খাওয়া অধিক উপকারী।
  • আমলকির টক এবং তেতো মুখে খাবারের রুচি বাড়ায়
  • আমলকি আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট দূর করতে সাহায্য করে
  • আমাদের রক্তের লোহিত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে দাঁত ও নখ ভালো রাখে
  • এটি সর্দি কাশি দূর করতে অধিক কার্যকরী

আমলকির পুষ্টিগুণ

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আমাদেরকে আমলকির পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও জানতে হবে। আমলকির যে পরিমাণ গুনাগুন রয়েছে সেই পরিমাণ গুণাগুণের কথা চিন্তা করলে আমলকিতে সুপার ফুডের থেকেও এগিয়ে রাখা যাবে। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। শুধু ভিটামিন সি নয় এছাড়া অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে আমলকিতে। ১০০ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন সি আছে ৪৬৩ মিলিগ্রাম।

এই তথ্যটি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। এগুলো ছাড়াও আমলকির রয়েছে অনেক ভেষজ গুণাবলী। আমলকী গাছের ফল ও পাতা দুটোকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আপনি প্রতিদিন নিয়মিত আমলকির রস গ্রুহণ করলে আপনার কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এছাড়াও আমলকিতে বিদ্যমান প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আমলকির অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আপনাদের পুষ্টিগুণ গুলো।
  • আমলকি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
  • চুল পড়া কমায় ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে
  • চুলের খুশকি রাস করে
  • নিয়মিত আমলকি খেলে গ্যাস্ট্রিক বা আলসার দূর হয়
  • আমলকি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে অধিক কার্যকরি
  • আমলকি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে অধিক কার্যকরি
  • হারকে অধিক পরিমাণ শক্ত এবং মজবুত করে
  • রক্ত পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে
  • দেহের চর্বি কমাতে পথিক অধিক উপযোগী

চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা

আজকাল সুপার ফুড বলতে একটা কথা চালু আছে। যে খাদ্যের ভেতর অন্যান্য খারাপের চেয়ে খাদ্য উপাদান বেশি থাকে এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ থাকে অত্যাধিক পরিমাণে তাকে সোফার ফুট বলে। সুপার ফুড হিসেবে আমলকির কথা বলতে গেলে থেকে সুপারপুরের অনেক আগে এগিয়ে রাখা যায়।
চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা
কারণ এতে রয়েছে বিভিন্ন পরিমাণ খাদ্য উপাদানসহ অনেক উপাদান। আমলকির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে আমলকির চুলেরও একটু উপকারিতা রয়েছে। চলুন তাহলে এখন আমলকি চুলে ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

খুশকি নিঃসরণঃ সুস্থতার কারণে আমাদের মাথায় খুশকি হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকির তেল ব্যবহার করার ফলে মাথার খুশকি অনেকটাই কমে যায়।

চুলের বৃদ্ধিঃ আমলকিতে অধিক পরিমাণে রয়েছে ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল। যা চুলের বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে।

চুলের ক্ষতি এড়ানোঃ আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ট্যানিন এবং ক্যালশিয়াম। যার চুলকে ভেঙে যেতে এবার চুলার ক্ষতি করতে বাধা দেয়। এবং চুল থাকে সুরক্ষিত।

শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে জানতে পেরেচ্ছি। আমরা কম বেশি সকলেই আমলকি পছন্দ করি। আমলকি হল টক ও তেতো সাত যুক্ত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি কার্যকরী ভেষজ উপাদান। এর স্বাদ প্রথমে কষটে লাগলেও পরবর্তীতে খাওয়া শেষে পানি খেলে বা এমনিতেই মিষ্টি একটি স্বাদ পাওয়া যায়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে আমলকিতে পেয়ারার চেয়ে ১০ গুণ এবং লেবু অথবা কমলা লেবুর চেয়ে ৩ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়াও আমলকিতে কমলার চেয়ে ২০ গুণ বেশি আমের থেকে ২৪ গুন কলার থেকে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এ সকল উপকারিতা ছাড়াও আমলকির রয়েছে অনেক উপকারিতা। যেগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • হজম প্রক্রিয়ায় কাজ করতে সাহায্য করে
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে অধিক উপযোগি
  • নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে
  • চুলের খুশকির সমস্যা দূর করে
  • পাকা চুল প্রতিরোধ করে
  • মুখের স্বাদ বৃদ্ধিতে আমলকির টক ও তেঁতো সাহায্য করে।
  • আমলকি মুখের রুচি বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতার মধ্যে খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অন্যতম। আমলকিতে অনেক ধরণের ঔষধি গুন রয়েছে। যার ফলে আমলকিকে সুপার ফুড হিসেবে বিবেচিত করা হয়। খালি পেটে আমলকি খাওয়ার অনেক গুনাগুন ও উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে হল শরীরের মেদ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। আমরা তরুণ সম্প্রদায় প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবুর রস খাই।

যেটা আমাদের শরীরের ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আপনি এর থেকেও ভাল উপকার পাবেন যদি প্রতিদিন সকালে আমলকি খালি পেটে খান। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমলকির কিছু টুকরো করে হালকা কুসুম গরম পানি করে তাতে আমলকি ছেড়ে দিন। তার কিছুক্ষণ পর সেই পানি হালকা ঠান্ডা করে নিয়ে পানিটি খেতে হবে। এবং তার সাথে আমলকি টুকরোগুলো খেতে পারেন।

যার ফলে আপনার লেবুর থেকেও আমলকি অনেক উপকারে আসবে। আপনার শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করবে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও আপনি আমলকির জুস অথবা কাঁচাই খেতে পারেন।

আমলকি কখন খাওয়া উচিত

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জেনে আমলকি থেকে সঠিক উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমলকি কখন খাওয়া উচিত কখন খেলে আপনি সবথেকে বেশি উপকৃত হবেন এই বিষয়েও জানা উচিত। এই সকল প্রশ্ন যাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আপনি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন আমলকি কখন খাওয়া উচিত।

আমলকি আপনি প্রতিদিন সকালে সাধারণত একটি অথবা দুটি করে খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের মেদ কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে প্রতিদিন সকালে আপনাকে খালি পেটে সেটি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও আপনি রাতে ঘুমানোর পূর্বে একটি করে আমলকি অথবা অর্ধেক খেতে পারেন। যার ফলে এটি আপনার রাতের খাবার পরিপাকে সহায়তা করবে।

আমলকি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্নঃ আমলকির রস কখন খেতে হয়?
উত্তরঃ আমলকি থেকে সঠিক উপকারিতা পেতে হলে প্রতিদিন সকালে আমলকির রস খেতে পারেন।

প্রশ্নঃ প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়?
উত্তরঃ আমলকি প্রতিদিন খেলে অনেক ধরণের উপয়াকার পাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিদিন ১ থেকে ২ টির বেশি খাওয়া না হয়। আর এটা অতিরিক্ত বেশি খাওয়া উচিতও নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে।

প্রশ্নঃ আমলকি খেলে কি গ্যাস কমে?
উত্তরঃ হ্যা, আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাস এবং অম্বলের মতো সমস্যার সমাধান হয়।

প্রশ্নঃ আমলকি খেলে কি চুল পড়া বন্ধ হয়?
উত্তরঃ প্রতিদিন নিয়মিত আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে প্রায় ৮০% মানুষের চুল পরার সমস্যার সমাধান হয়েছে। এটি চুলের গোড়াকে মজবুত করার পাশাপাশি চুলকে করে তোলে উজ্জ্বল এবং সাইনিং।

লেখকের মন্তব্য

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পাঠে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো। আমলকি হল একটি প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদিক ফল। যেটা আমাদের শরীরের জন্য অধিক উপকারী। আশা করছি আপনি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Post a Comment

Previous Post Next Post