ব্যাংক কি ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশপ্রিয় পাঠক, ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? অথবা আপনি কি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট ফরম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি এখন সঠিক জায়গাতেই রয়েছেন। কারণ আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় তার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাই শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চার্জ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

আর্থিক নির্ভরতার জন্য আমরা সকলেই এখন ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য আগ্রহী। তবে কোন নিয়ম অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হয় এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। কিভাবে আপনি খুব সহজেই ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন সেই সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

বর্তমান সময়ে আপনি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট দুই ভাবে খুলতে পারবেন। সেগুলো হলো
  • সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হয়ে
  • ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন এপ্লিকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে
ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট যদি আপনি সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় অবস্থিত হয়ে খুলতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট আবেদন ফরম সংগ্রহ করে নিতে হবে। আবেদন ফরম নেওয়ার পরে আবেদন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে তার সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্ত করে ব্যাংকের শাখা অফিসের এজেন্টকে জানাতে হবে।

ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আপনার আবেদন ফরমের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে যদি সবগুলো সঠিক থাকে তাহলে আপনাকে প্রাথমিকভাবে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলা হয়ে গেছে বলে জানাবে। এরপরে আপনাকে বলবে প্রাথমিক ডিপোজিট কাজ সম্পন্ন করতে। এখন একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে পরবর্তীতে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে কত তারিখে ডেবিট কার্ড অথবা চেক বই প্রদান করা হবে।

সেই তারিখ অনুযায়ী আপনি ইসলামী ব্যাংকে থেকে ডেবিট কার্ড অথবা চেক বই সংগ্রহ করতে পারবেন। এভাবেই আপনি মূলত ম্যানুয়ালি ইসলামী ব্যাংকের শাখা অফিসে গিয়ে সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। এছাড়াও আপনি যদি বাড়িতে বসে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান তাহলে আপনি ইসলামী ব্যাংকের সেলফ ইন একাউন্ট ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। চলুন তাহলে একাউন্ট থেকে কিভাবে আপনি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট ভুলবেন সেটি চলুন জেনে নেওয়া যাক।

অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

অনলাইনের মাধ্যমে আপনি এখন ঘরে বসে থেকেই ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন। আর এজন্য আপনাকে প্রথমে ফোনের গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে আপনাকে সার্চ বারে সার্চ করতে হবে সেলফিন (Cellfin) লিখে। এরপর প্রথমে যে এপ্লিকেশনটি আপনি দেখতে পাবেন সেটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন। এরপরে কিভাবে কাজ করতে হবে তার সকল ধাপগুলো নিম্নে আমরা স্টেপ বাই স্টেপ দেখাবো।

ধাপ-০১ঃ সেলফিন অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করা হয়ে গেলে অ্যাপ্লিকেশনের ভেতরে প্রবেশ করুন। এখন এখানে রেজিস্টার বাটন দেখতে পাবেন, সেখানে ক্লিক করুন।
  • রেজিস্ট্রেশন ফ্রম বাংলাদেশ সিলেক্ট করে নিন
  • পূর্বে থেকে আপনার যেহেতু কোন ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট নেই এক্ষেত্রে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সিলেক্ট করে নিন।
  • এখন প্রথমে মোবাইল সিম অপারেটর, তারপরে মোবাইল নাম্বার, এবং পরবর্তীতে সেই নাম্বারে পাঠানো ছয় ডিজিটের একটি ভেরিফিকেশন কোড লিখুন।
  • নাম্বার ভেরিফাইড কাজ সম্পন্ন করুন
  • আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ছবির সামনের পেজের এবং পেছনের পেজের ছবি আপলোড করুন
  • এর পরে আপনার ফেস ভেরিফাই করতে বলবে আপনার ফেস ভেরিফাই করে নিন
ধাপ-০২ঃ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে এখন একাউন্টে লগইন করে নিন। ড্যাশবোর্ড থেকে নিচের ওপেন একাউন্ট অপশনে ক্লিক করতে হবে। আপনি যেহেতু প্রথমবার এই একাউন্টটি করছেন আপনাকে আবার সেলফিন পিনকোড সাবমিট করতে হবে।

ধাপ-০৩ঃ এই ধাপে এসে আপনাকে পরবর্তী সকল নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করতে হবে। যেমন
  • ইসলামিক ব্যাংকের কোন ব্রাঞ্চে একাউন্ট আপনি নিতে চান সেটি সিলেক্ট করুন
  • আবেদনকৃত ব্যক্তির পিতা এবং মাতার নাম লিখুন
  • আবেদনকারী ব্যক্তির বৈবাহিক অবস্থা লিখুন
  • তার মাসিক আয় কত লিখুন
  • কোন উপায়ে তিনি আয় করেন এটি সিলেক্ট করুন
  • আবেদনকৃত ব্যক্তির পেশা সিলেক্ট করুন
  • আবেদনকারের বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করুন
সকল তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। এখন আপনি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম মেনে সেখানে যতগুলো তথ্য দিয়েছেন এই তথ্যগুলো যাচাই করব কনফার্ম (Confirm) বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ-০৪ঃ এই ধাপে এসে আপনাকে একাউন্ট ধরন নির্বাচন করে নিতে হবে। মূল কথা হলো আপনি কোন ধরনের ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে চান সেটা এখানে এসে নির্বাচন করতে হবে। এখানে এসে আপনি অনেক ধরনের ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার অপশন দেখতে পাবেন।

আপনি যেহেতু এই একাউন্টটি দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার করবেন তাই আপনি এখানে এসে মুদারাবা সেভিংস একাউন্ট (Mudaraba Savings Account- MSA) সিলেক্ট করে নিয়ে নেট বাটনে ক্লিক করবেন। এখানে আপনার থেকে আইডেন্টি ভেরিফিকেশন এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ছবি চাইতে পারে। তবে আপনি যদি একাউন্ট রেজিস্টার করার সময় জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে একাউন্টে আইডেন্টি ভেরিফিকেশন করে ফেলেন তাহলে এখানে ছবি দিতে হবে না।

ধাপ-০৫ঃ এইভাবে এসে আপনাকে নমিনির সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। নমিনি বলতে বোঝায় সেই ব্যক্তি যে আপনার পরিবর্তে আপনার একাউন্টের লেনদেন করতে পারবে। এখানে এসে আপনার একাউন্টের জন্য যে ব্যক্তির নমিনি হবেন তার ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার যে সকল তথ্যপূরণ করতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ।
  • প্রথমে নমিনি এর নাম
  • তারপর নমিনি ব্যক্তির পিতা-মাতার নাম
  • ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর
  • একাউন্টের সাথে নমিনি ব্যক্তির কি সম্পর্ক
  • নমিনিকৃত ব্যক্তির জেলার নাম, উপজেলার নাম, পোস্টকোড এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা
  • ভোটার আইডি কার্ডের ছবি
  • নমিনি ব্যক্তির ছবি আপলোড করে নিয়ে Next বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি সাবমিট করুন
ধাপ-০৬ঃ এইভাবে এসে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসারে আপনি যে সকল তথ্য পূরণ করেছেন সেই সকল তথ্যগুলো আবার পুনরায় দেখতে পাবেন। এখানে এসে সকল তথ্যগুলো যদি আপনার পূরণ হয়ে থাকে সঠিকভাবে তাহলে আপনি পরবর্তীতে কনফার্ম (Confirm) নামক বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে একাউন্টটি খোলার জন্য নিশ্চিত করুন।

এইভাবে আপনার ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট সফল হবে খোলা হয়ে যাবে। তার জন্য আপনি নিজের সঠিকভাবে ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খুলেছেন তার জন্য একটি মেসেজ পাবেন। এই মেসেজের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যাংক একাউন্টের নম্বর দেখতে পাবেন। এই নম্বরটি সংগ্রহ করে রেখে দিন। এভাবে আপনি ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার মাধ্যমে খুব সহজেই একটিএকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট ফরম

ইসলামে ব্যাংক একাউন্ট আপনি যে ধরনের ব্যাংক একাউন্ট ঠিক খোলেন না কেন তার জন্য আপনাকে একটু ফর্ম পূরণ করে ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যদি আপনি অনলাইনের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন এপ্লিকেশন ব্যবহার করে একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে কোন ফর্ম জমা দিতে হবে না। আপনি বাড়িতে বসে একাউন্ট খোলার কাজটি করে নিতে পারবেন।

তবে আপনি যদি ব্যাংকের শাখা গিয়ে একাউন্ট খুলতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি তাদের কাছে থেকে ফরম নিতে পারবেন। অথবা আপনি এখানে ক্লিক করুন। এখান থেকে ক্লিক করার মাধ্যমে এখান থেকে আপনি ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনিয় ফরম ডাউনলোড করে নিয়ে পূরণ করে তাদেরকে সরাসরি জমা দিতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জানার পাশাপাশি আমাদেরকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার সেই সম্পর্কেও জানতে হবে। আমরা সকলেই জানি যে ইসলামী ব্যাংক আমাদের দেশের মধ্যে অন্যতম একটি সু পরিচিত এবং বিখ্যাত ব্যাংক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটি তাদের গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে থাকে। আর সে জন্যই এই ব্যাংকের প্রতি জানার আগ্রহটা মানুষের সচরাচর বেশি থাকে। ইসলামী ব্যাংকে কোন প্রকার ঝামেলার হয়রানি ছাড়া আপনি বাড়িতে বসে থেকেই একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন।

আর তাই এজন্যই অনেকেই জানতে চান ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার সেই সম্পর্কে। আপনি যদি এই বিষয়ে জানতে চেয়ে থাকেন চলুন তাহলে এই বিষয়ে এখন বিস্তারিত জানা যাক। ইসলামী ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য সাধারণত তিনটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এই তিনটি একাউন্টের ধরন হলো
  • কারেন্ট একাউন্ট
  • সেভিং একাউন্ট
  • স্টুডেন্ট একাউন্ট
এই তিনটি একাউন্ট সাধারণত সকলে খুলতে পারে। তবে এছাড়াও আরো প্রায় 22 প্রকার ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সুযোগ সুবিধা গ্রাহকদের প্রদান করে থাকে। সেই সকল ব্যাংক একাউন্ট এর নাম গুলো নিম্নে তুলে ধরা হল।
  • মুদারাবা উপহার আমানত একাউন্ট
  • মুদারাবা স্পেশাল নোটিশ একাউন্ট (MSNA)
  • মুদারাবা সিনিয়র সিটিজেন মাসিক লাভ ডিপোজিট স্কিম
  • মুদারাবা এনআরবি সেভিংস বন্ড (MNSB)
  • মুদারাবা স্পেশাল সেভিংস (পেনশন) একাউন্ট (MSSA)
  • মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট একাউন্ট (MTDR)
  • মুদারাবা শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প
  • ছাত্রদের মুদারাবা সেভিংস একাউন্ট (SMSA)
  • মুদারাবা সেভিংস বন্ড (MSB)
  • মুদারাবা হজ সেভিংস একাউন্ট (MHSA)
  • মুদারাবা স্কুল শিক্ষার্থীদের সেভিংস একাউন্ট
  • মুদারাবা অগ্রাধিকার সেভিংস একাউন্ট
  • মুদারাবা মাসিক মুনাফা জমা হিসাব (MMPDA)
  • মুদারাবা উপহর আমানত
  • মুদারাবা কৃষক সঞ্চয় একাউন্ট (MFSA)
  • মুদারাবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমপ্লয়িজ সেভিংস একাউন্ট (MIESA)
  • মুদারাবা ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট একাউন্ট (MFCD)
  • মুদারাবা বিবাহো সঞ্চয় হিসাব
  • মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্ট (MWCDA)
  • মুদারাবা প্রবাসী হাউজিং ডিপোজিট স্কিম (MEHDS)
  • মুদারাবা বেতনের হিসাব একাউন্ট
  • মুদারাবা মুহর সেভিংস একাউন্ট (MMSA)
উপরের উল্লেখিত এই সকল অ্যাকাউন্ট গুলো ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম মেনে একাউন্ট তৈরি করতে হয়। আর এই সকল অ্যাকাউন্ট ইসলামে ব্যাংক খোলার জন্য পারমিশন এবং সেবা প্রদান করে থাকে।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা

আমরা সকলেই জানি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ভেতর একটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। আর এই ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব ইসলামী ব্যাংকের একাউন্ট মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় একটি একাউন্ট। আর সবথেকে জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ হলো এই ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট একটি শারিয়া ভিত্তিক সঞ্চযী হিসাব।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম হওয়ার কারণে ইসলামিক শারিয়া মোতাবেক এই ব্যাংকটি সুদের বিষয়টি না রাখার কারণে মুসলিমদের কাছে আমার সবথেকে জনপ্রিয় একটি ব্যাংক। এর প্রধান কারণ হল ইসলামী ব্যাংকে কোন প্রকার সুদ প্রদান করা হয় না। তারা ব্যবসায়িক লাভ হিসেবে প্রতি মাসে এবং বাৎসরিক হিসাব অনুযায়ী মনে হয় বন্টন করেন।

তাদের ব্যবসায়ী হিসাব মোতাবেক যদি ব্যবসায়ের মনে হয় বেশি হয় তাহলে আপনি মনে হওয়ার অংশ বেশি পাবেন। আর যদি মুনাফার অংশ কম হয় তাহলে আপনার অংশ কম হবে। আর এইসব অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক প্রতিবছর দুইবার, অর্থাৎ ছয় মাস পর পর লোভ্যাংশ প্রদান করে থাকে। আর ইসলামী ব্যাংক ব্যবহারের কিছু সুবিধা রয়েছে। চলুন তাহলে এবার এই সুবিধা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধাগুলো হলোঃ
  • ফ্রি ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং ব্যাংকিং ব্যবসায় ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়।
  • ব্যাংকিং লেনদেনের অ্যালার্ট সুবিধা
  • প্রতি ৭ দিনের ২৪ ঘন্টা কল সেন্টারের সুবিধা
  • MCIR চেক বই ব্যবহারের সুবিধা
  • বাড়িতে বসে সেলফিন এপ্লিকেশন ব্যবহার করেই একাউন্ট খোলার সুবিধা
  • ভিসা কার্ড ব্যবহার করে ফ্রিতে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সুবিধা
  • শারিয়া ভিত্তিক ব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধা
  • ঘরে বসেই নিজের অ্যাকাউন্ট চেক করার সুবিধা
এছাড়াও আপনি ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থাকার সুবিধার্থে আপনি এখান থেকে একটি ভার্চুয়াল ডেবিট কার্ড নিতে পারবেন। যার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে থেকেই দেশে এবং বিদেশে যেকোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন। উপরে বললে কিন্তু এই সকল সুবিধা গুলো ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনি নিতে পারবেন।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে

আমরা তো সকলেই ইতিপূর্বে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এবং তার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগে থাকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে। আপনিও যদি এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকেন চলুন তাহলে এই বিষয়ে জেনে নেই।

ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তেমন কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। এজন্য ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ এক হাজার টাকা ন্যূনতম ডিপোজিট রাখতে হয়। আর এই টাকাটি আপনি আপনার একাউন্টের মধ্যে পেয়ে যাবেন। যেখান থেকে আপনি 500 টাকা কখনোই উত্তোলন করতে পারবেন না।

এছাড়াও যদি আপনি চান ইসলামী ব্যাংকের স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে তাহলে সেক্ষেত্রে মাত্র ১০০ টাকা প্রদান করে ইসলামী ব্যাংকের স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন। আর এই প্রদেয় টাকা আপনি আপনার একাউন্টে সাথে পেয়ে যাবেন।

ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চার্জ

ইসলামী ব্যাংকে আপনারা যারা সেভিংস একাউন্ট খুলতে চান তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেভিংস একাউন্টের চার্জ কত টাকা কাটা হয় সে সম্পর্কে জানা উচিত। আপনি যদি এই বিষয়ে না জেনে থাকেন নিম্নের দেখানো টেবিল চার্ট থেকে ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চার্জ সম্পর্কে জেনে নিন।

জমাকৃত টাকার পরিমাণ

বাৎসরিক চার্জ

১০,০০০ টাকার নিচে

চার্জ কাটা হবে না

১০.০০০ টাকা - ২৫,০০০ টাকা

১১৫ টাকা

২৫,০০০ টাকা - ২,০০,০০০ টাকা

২৩০ টাকা

২,০০,০০১ টাকা - ১০,০০,০০০ টাকা

২৮৭ টাকা

১০,০০,০০০ টাকার অধিক

৩৪৫ টাকা

উপরের উল্লেখিত ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট চার্জের মধ্যে সরকারি ভ্যাট যুক্ত করা আছে। আর আপনার সঞ্চয়ী সেভিংস একাউন্টের জন্য টেবিলে দেখানো চার্জ প্রতি বাৎসরিক কেটে নেওয়া হবে। আশা করছি আপনাদেরকে এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করতে পেরেছি।

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংকের নতুন নাম কি?
উত্তরঃ পূর্বে ইসলামী ব্যাংকের নাম ছিলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এখন সেটি পরিবর্তন করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি রাখা হয়েছে।

প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংকের সুদের হার কত?
উত্তরঃ বাংলাদেশের প্রদানকৃত তথ্য অনুযায়ি ইসলামী ব্যাংকের আমানতের গড় সুদের হার ৩.৬৯% এবং ঋণের জন্য গড় সুদের হার ৬.৭৫%

প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংক কি কি লোন দেয়?
উত্তরঃ ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের লোন প্রদান করে থাকে। যেমন
  • নির্মাণ লোন
  • রিয়েল এস্টেট বিজনেস লোন
  • কৃষি লোন
  • ব্যবসা লোন
  • শিল্প লোন
  • ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য লোন
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের নাম কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের নাম হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

প্রশ্নঃ ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়?
উত্তরঃ ব্যাংক একাউন্টে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা পর্যন্ত রাখা যায়।

প্রশ্নঃ কত বছর বয়সে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়?
উত্তরঃ ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হয়।

প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
উত্তরঃ ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে যেসকল ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় সেগুলো হলো
  • ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • নমিনির পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি

সর্বশেষ বক্তব্য

ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হবেন। এমন আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল প্রতিদিন ফ্রীতে পড়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post