রসুন ও কালোজিরার উপকারিতাপ্রিয় পাঠক, সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ এবং সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে আজকে আমরা এই পাঠে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বর্তমানে বাংলাদেশে সিজারকৃত ব্যাক্তির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে করান্বয়ে। আর এই সিজার করা হয় মায়ের পেটে ও জরায়ুতে। সিজারের পরে নিয়ম না মেনে চললে কিছু সমস্যার দেখা দেয়।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
তাই আপনার অবশ্যই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা উচিত। সিজারের পরে কেন ইনফেকশান হয়। আর কোন কারণেই বা হয় এর সকল লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য শেষ পর্যন্ত অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

পেজ সূচিপত্রঃ

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

আপনারা যারা সিজার করেন তাদের অবশ্যই সিজারের পরে কেন ইনফেকশন হয় তার লক্ষণ গুলো কি কি এই সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। আপনারা যদি অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও সিজারের পর ইনফেকশনের সম্পর্কে জানতে পারেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি মূলত এই টপিকের উপরে সাজানো হয়েছে। তাই বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

সিজার করা হয় এক বা একাধিক শিশুর জন্মদানের সময় মায়ের পেটে অথবা জরায়ুতে। সাধারণত সিজার করা হয় যখন প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী নরমালে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে অসুবিধা হয়। আপনি যদি সিজার করেন বাচ্চা জন্মদিনের সময় তাহলে অবশ্যই আপনাকে অনেক সজাগ থাকতে হবে এই বিষয়ে। কারণ সিজারের ফলে অসচেতনতার কারণে আপনার ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। ইনফেকশনের লক্ষণগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।
  • অপারেশনের জায়গাটিতে অনেক পরিমাণে লাল হয়ে যাওয়া হলো ইনফেকশানের লক্ষণ
  • অপারেশনের জায়গাটি ফুলে যাওয়া
  • অপারেশনের জায়গাটিতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভুত হওয়া
  • অপারেশনের জায়গা থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধজাতীয় তলর বের হওয়া
  • শরীরে কিছু সময় পর পর জ্বর অনুভুত হওয়া
  • প্রস্রাবে যন্ত্রণা হওয়া
উপরে উল্লেখিত এই সকল ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো ছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আপনার মাঝে যদি এমন কোন ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনি যদি এই সময় সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করেন তাহলে ইনফেকশনের রক্তের পুরো শরীরের ছড়িয়ে গিয়ে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

সিজারের পর খাবার তালিকা

সিজার করার পরবর্তী সময়ে সিজারকৃত ব্যক্তির খাবারের তালিকার ওপর বিশেষভাবে নজরদারি রাখতে হবে। সিজারের পরে খাবারের প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হবে। তাহলে রোগী খুব দ্রুত শরীরের ঘাটতি পুষিয়ে নিয়ে খুব সহজেই সুস্থ হতে পারবেন। আপনারা যারা সিজারের রোগী রয়েছেন অথবা যারা পরবর্তী সময়ে সিজার করাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য সিজারের পরে কোন কোন খাবার গ্রহণ করতে হবে তার তালিকা সম্পর্কে এখন জানাবো।

যেহেতু সিজার করার জন্য অস্ত্র পাচার প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্তানের জন্মগ্রহণ করানো হয় আর এজন্যই সেই সময়ে গর্ভবতী মায়ের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়। এছাড়াও সিজার করার সময় যেহেতু শরীর কাটা হয় তাই শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়ে যায়। আর তাই সিজারের এই ঝুঁকি সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য সেই ব্যক্তির খাবারের উপর ভালোভাবে নজর রাখতে হবে।

সিজার করার ফলে যেহেতু মায়ের শরীর থেকে অনেক রক্ত চলে যায় সেহেতু সিজারকৃত মাকে এমন ভাবে খাবার খাওয়াতে হবে যাতে করে মা শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি বাচ্চাও যেন অধিক পরিমাণে মায়ের শরীর থেকে দুধ পায়। আসুন তাহলে এখন আমরা জেনে নেই সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে।

তরল জাতীয় খাবারঃ সিজারকৃত ব্যাক্তির খাবার খাওয়ানোর দিকে নজর রাখার জন্য তার জন্য এমন খাবার তৈরি করতে হবে সেই খাবার যেন তরল কিছু হয়। নিয়োমিত যদি রোগি তরল জাতীয় খাবার খায় তাহলে খুব তাড়াতাড়িই রোগীর শরীরের পানি শুন্যতা পূরণ হয়ে যাবে। যার জন্য মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনে অনেক সাহায্য করবে এবং বাচ্চা ভালো পরিমাণে দুধ পাবে।

ফলমূল এবং শাক সবজিঃ সিজারকৃত ব্যাক্তিকে প্রচুর পরিমাণে টাটকা ফলমূল খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। আর তার পাশাপাশি রোগিকে শাক-সবজি ও খাওয়াতে হবে। তার ফলে শরীরে অনেক ভালো পুষ্টির যোগান দিবে। যাতে করে রোগি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ আমরা সকলেই জানি সিজার করার সময় অনেক রক্তপাত হয়। আর এর রক্ত পূরণ করার জন্য এবং দূর করার জন্য অবশ্যই রোগীকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

দুধ, ডিম জাতীয় খাবারঃ সিজারের পরে রোগিকে দুধ, ডিম জাতীয় এই সকল খাবার খাওয়াতে হবে। তার ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রটিন এর যোগান হবে। যেটা রুগিকে সুস্থ করতে এবং বাচ্চার হাড় এবং দাঁত গঠন করার জন্য অনেক সাহায্য করবে।

কালোজিরাঃ আপনারা হয়তো সকলের জেনে থাকবেন যে কালোজিরা হলো সকল রোগের মহাঔষধ। তাই সিজারের পরের খাবার তালিকা হিসাবে আপনি খাবার তালিকায় কালোজিরা যোগ করতে পারেন। এতে করে এটি অত্যধিক পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনে সহায়তা করবে। যদি এটি আপনি সকালে খালি পেটে মধুর সাথে খাওয়ার অভ্যাস গড়তে পারেন তাহলে আরো অনেক ভালো হয়।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ সিজারকৃত ব্যক্তিকে অবশ্যই এমন খাবার খেলে দিতে হবে যে খাবারগুলো অনেক বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ। যদি নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে এটি খাবার হজম করার জন্য অনেক ভালো সহায়তা করবে। এবং তার পাশাপাশি পেটে যেন গ্যাসের সমস্যা না হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।

এতক্ষণ তো আমরা সকলেই জানলাম সিজারের রোগীর কোন কোন খাবার খেতে হবে। এই পর্যায়ে আমরা এই পার্টের সম্পর্কে জানবো সিজারের পরবর্তী কোন কোন খাবার গ্রহণ করা যাবে না। যেগুলো খেলে পারে আপনার স্বাস্থ্যকে বাড়তে পারে সেই খাবারগুলো অবশ্যই আপনি না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। চলুন তাহলে এই বিষয়েও এখন জেনে নেওয়া যাক।

অতিরিক্ত ঝাল মসলাযুক্ত খাবারঃ সিজার পরবর্তী সময়ে সব সময় চেষ্টা করবেন অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত খাবার অথবা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়ার। এর পাশাপাশি আরো চেষ্টা করবেন ভাজাপোড়া জাতীয় জিনিস না খাওয়ার। এর কারণ হলো আপনি যদি এই সকল খাবার গ্রহণ করেন তাহলে আপনার পেটে গ্যাস সহ আরো নানান ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।

চা অথবা কফি কম খাওয়াঃ সিজারের পরবর্তী সময় সব সময় বেশি চেষ্টা করবেন চা অথবা কফি না খাবার। যদি খেতে চান তাহলে অবশ্যই অনেক কম পরিমাণে খাবেন। এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন সিজারের পরবর্তী সময়ে আপনি যদি চাও অথবা কফি অনেক বেশি পরিমাণে খান তাহলে এটি আপনার শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।

আর তার ফলে আপনার অনিদ্রা সহ বিভিন্ন ধরনের আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই আমাদের সাজেশন থাকবে সব সময় আপনি চা অথবা কফি যেটাই খান না কেন সেটি অনেক কম পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

সিজারের পর খাবার তালিকাগুলো যদি সংক্ষেপে বর্ণনা করি তাহলে আপনার বুঝার জন্য আরো অনেক সুবিধা হবে। চলুন তাহলে এবার সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
  • প্রতিদিন হালকা গরম পানি পান করার চেষ্টা করুন
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন
  • ডাল অথবা শস্য জাতীয় খাবার নিয়োমিত গ্রহন করার চেষ্টা করুন
  • ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন
  • পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন
  • শরীরের রক্ত উৎপাদনে সহযোগিতা করে এমন খাবার অবশ্যই খেতে হবে
  • ভিটামিন-সি/টক জাতীয় খাবার খুব বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন
  • প্রটিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে
  • আইরনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন
  • শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাবেন
  • ক্যাফেইন জাতীয় খাবার (চা, কফি) এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

কোন লক্ষন গুলো দেখলে বুঝবেন সিজার করানো দরকার

সিজার আসলে কেউ করতে চায় না সহজেই। তবে আপনার ক্ষেত্রে যদি এমন কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেটি আপনার শরীরের জন্য ঝুঁকি জনক হতে পারে তাহলে অবশ্যই আপনার সিজার করানো উচিত। তাহলে এখন কোন কোন লক্ষণ গুলো দেখার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন এই অবস্থায় আপনার সিজার করাতে হবে চলুন তাহলে এই সম্পর্কে এখন জেনে নেই।
  • অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে যদি এমন সমস্যার সৃষ্টি হয় যার ফলে মা এবং শিশু দুজনেই ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকে থাকে তখন অবশ্যই আপনাকে সিজার করাতে হবে।
  • বাচ্চার মাথা যদি প্রসবের রাস্তা থেকে অনেক বড় আয়তনে হয় তখন অবশ্যই সিজার করাতে হবে।
  • বাচ্চা হওয়ার জন্য যখন লেবার পেইন উঠবে সেই সময় থেকে যদি ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা স্বাভাবিক প্রসব না হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সিজার করাতে হবে।
  • বাচ্চা যদি মায়ের পেটে সঠিক স্থানে না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে সিজার করাতে হবে।
  • গর্ব অবস্থায় যদি মা শারীরিকভাবে অনেক বেশি দুর্বল থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে সিজার করাতে পারেন। কারণ নরমাল ডেলিভারির সময় যে কষ্টটা হয় এটি দুর্বল অবস্থায় কোন ব্যক্তির পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় নরমাল ডেলিভারি করাতে গেলে তাহলে হয়তো সে ঝুঁকের মুখে পড়তে পারে।
  • যদি মায়ের হাই প্রেসার অথবা ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে সিজার করাতে হবে।
  • যদি মায়ের প্রসবের রাস্তা দিয়ে আম্বিলিক্যাল কর্ড বের হয়ে চলে আসে তাহলে সিজার করানো অনেক জরুরি।
  • বাচ্চা প্রসবের রাস্তায় যদি অস্বাভাবিকভাবে রক্তক্ষরণ অথবা পানি ভাঙ্গে তাহলে এই সমস্যার জন্য অবশ্যই আপনাকে সিজার করাতে হবে।
  • যদি আপনার জরায়ুর অথবা প্রসবের রাস্তায় টিউমার থেকে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে সিজার করাতে হবে।

সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো সম্পর্কিত আপনারা ইতিপূর্বে জানতে পারলেন। এখন যারা পরবর্তী সময়ে সিজার করাতে চাচ্ছেন তাদের অনেকের মনে এমন ধরনের প্রশ্ন থাকে যে সিজার পরবর্তী সময়ে ব্যথা কতদিন থাকে। আজকে আপনাদেরকে খুব সাধারণভাবে আমরা এই বিষয়টি সম্পর্কে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সিজারের পরবর্তী সময়ে সিজারের ব্যথা কতদিন পর্যন্ত থাকবে সেটা নির্ভর করে যে ব্যক্তির সিজার করা হবে সেই ব্যক্তির চলাফেরা লাইফস্টাইল এবং শরীরের বৈশিষ্ট্যের উপর। এর কারণ হলো আমাদের সকলের শরীরের কাঠামো এক ধরনের হয় না। বিভিন্ন ধরনের মানুষের শরীরের কাঠামো বিভিন্ন ধরনের হয়। এমন অনেকে রয়েছেন যাদের কাঁটাস্থানের ক্ষত শুকাতে খুবই অল্প সময় লাগে।

আবার এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের কাঁটা স্থানের কত শুকানোর জন্য অনেক বেশি সময় লাগে। আর এটি হলো মূল কারণ সিজারের পরে ব্যথা থাকার। যার কাঁটা স্থানের হতো শুকাতে যত বেশি সময় লাগবে তার ততদিন পর্যন্ত ব্যাথা থাকতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সিজারের পরের ব্যথা সকলের ক্ষেত্রে এক না হয়ে কম বেশি হয়।

তবে যদি সাধারণভাবে বলা হয় তাহলে সিজারের পরে সম্পূর্ণভাবে ব্যথা ছেড়ে যেতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ অথবা একমাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে। বেশিরভাগ মানুষজনের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গিয়েছে তাদের সিজারের পরে ক্ষত ১-২ সাপ্তাহের মধ্যেই খুব দ্রুত শুকিয়ে গিয়েছে। আর তার ফলে ১-২ সাপ্তাহতেই তাদের ব্যাথা পুরোপুরি সেরে গিয়েছে।

সিজারের পর কতদিন বেল্ট পরতে হয়

সিজারের পরে কতদিন বেল্ট ব্যাবহার করবেন এই নিয়ে অনেকেই নানান ধরণের প্রশ্ন করে থাকেন। আজকে তাই আমরা এই বিষয়ে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি। আপনি যদি সিজারের পড়ে বেল্ট পড়ে থাকেন তাহলেও আপনার বেশ কিছু উপকারিতা হবে। চলুন তাহলে এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার ফলে ডাক্তারেরা বেল্ট ব্যাবহার করতে বলেন। এর কারণ হলো পেটের মেদের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। আর তাই এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগে। তাই এই বিষয়ে বেশি চিন্তা না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

সিজারের পর ১ থেকে ২ সাপ্তাহ অর্থাৎ ৭ থেকে ১৪ দিন সময় পর্যন্ত অবশ্যই আপনাকে বেল্ট পরতে হবে। এতে করে আপনার পেটের চর্বি কমে গিয়ে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে অনেক সহযোগিতা করবে। এছাড়াও অপারেশন করার পরে আপনার পেটের যেই অংশ কাটা হয়েছে সেই অংশের নাড়াচাড়া কমাতেও অনেক কাজে আসবে। আশা করছি আপনি এই বিষয়ে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়

সন্তান জন্মদানের জটিলতার কারণে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে সিজারের মাধ্যমিক সন্তান জন্মদান এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর সেই সাথে সাথেই মানুষজনের সিজার করার প্রবণতাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় এমন দেখা যায় সিজার করার সময় অস্ত্র পাচার করার কারণে, হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সিজারকৃত মায়ের অপুষ্টি এই সকল সমস্যার কারণে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে। ইনফেকশন কেন হয় এখন সেই বিষয়ে আমরা জানবো।
  • যদি রক্তনালী ঠিকঠাক মত কাজ না করে তাহলে রক্ত জমাট বাধার ফলে ইনফেকশন এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যদি সিজারকৃত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থেকে থাকে তাহলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অপারেশন করার সময় যে পানি ব্যবহার করা হয় যদি সেই পানি ঠিকঠাক স্টেরয়েল করা না হয় সে ক্ষেত্রে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
  • যদি অপারেশন থিয়েটারে রোগীর জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করা হয় তাহলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
  • হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণেও ইনফেকশন হতে পারে।
  • সিজারের পরবর্তী সময়ে যদি মায়ের অপুষ্টি সমস্যা থাকে তাহলে ইনফেকশন হতে পারে।

সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণগুলো সম্পর্কে তো আমরা ইতিপূর্বে সকলেই জানতে পারলাম। সিজারের পরে যদি ইনফেকশন হয়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি সেই সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত জানবো। আপনি যদি সিজারের পরবর্তী সময়ের করণীয় উপায় গুলি অবলম্বন করে থাকেন তাহলে আপনার ইনফেকশন সমস্যা খুব দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে। চলুন তাহলে এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

আমরা তো সকলেই জানি শিশু জন্মের জন্য সিজার করা হয় মায়ের পেটে অথবা জরায়ুতে। সিজার করা হয় সেই সময়ে যখন সন্তান জন্মদান করানোর জন্য প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে জন্মাদান করানো সম্ভব হয় না। আর তাই এটি অনেক বড় ধরনের অপারেশন ঝুঁকি। তাই যদি কেউ সিজার করে তাহলে সে ক্ষেত্রে তার সেরে ওঠার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়।

সিজার পরবর্তী সময়ে সিজারের পর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখলে এবং সঠিকভাবে বিশ্রাম এবং যত্ন নিলে খুব দ্রুতই সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। যদি এই অবস্থাতে আপনার ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে এর পরবর্তীতে করণীয় কি সেই সম্পর্কে জেনে রাখা অবশ্যই আপনার ক্ষেত্রে জরুরী।

সিজার পরবর্তী সময়ে পরবর্তী 24 ঘন্টার মধ্যে রোগীকে অবশ্যই নিজে নিজে হাঁটাচলা করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে করে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। আর তার হলে ব্যথা অনেক কমে যাবে।
  • অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এমন জাতীয় সকল খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সিজারের পরবর্তীতে ইনফেকশনের সমস্যা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
  • সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি অনেক বেশি পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে।
  • ভিটামিন সি যুক্ত খাবার তো অবশ্যই খেতে হবে। ভিটামিন সি যুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে আমলকি, লেবু, মালটা এছাড়াও আরো টক জাতীয় খাবার। যেটা আপনার সেলাই এর ঘা শুকানোর জন্য অনেক সাহায্য করবে।
  • পেটের সেলাই করা অংশে বারবার হাত দেওয়া যাবে না। এতে করে আপনার ইনফেকশনের সমস্যা আরো বৃদ্ধি হতে পারে।
  • আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সহবাস হতে বিরত থাকতে হবে
আপনি যদি উপরের দেখানো কাজগুলি সকল সঠিকভাবে করেন এবং নিয়ম মেনে চলাফেরা করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ইনফেকশনের সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। এবং আপনি যদি সুষম খাবার নিয়মিত গ্রহণ করেন তাহলে আপনি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। আশা করছি এ বিষয়ে আপনাদেরকে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

সিজারের সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্নঃ সিজারের ভিতরে ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবো?
উত্তরঃ সিজারের ভিতরে ইনফেকশন হলে বুঝার সবথেকে বড় উপায় হলো পেটে অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যাথা করা। এমন কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

প্রশ্নঃ সিজারের ২ সপ্তাহ পর কতটা হাটা যায়?
উত্তরঃ সিজারের পরবর্তি সময়ে প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ৩৫ মিনিট হাটা যাবে। আর আপনি এটি অবশ্যই চেষ্টা করুন।

প্রশ্নঃ সিজার করার কত দিন পর জার্নি করা যায়?
উত্তরঃ সিজার করার পরে ১ থেকে দেড় মাস এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে করে শরীরের ওপর কোন চাপ পরে। তবে সিজারের ঘা শুকিয়ে গেলে আপনি জার্নি করতে পারেন।

প্রশ্নঃ সি সেকশন কতদিন লাগে?
উত্তরঃ সি সেকশন করতে প্রকৃত সময় লাগে ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত।

লেখকের মন্তব্য

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের প্রধান আলোচনার বিষয় ছিলো। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে এই সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট পড়তে পুরো ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখুন। নতুন নতুন পোস্ট প্রতিদিন পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Post a Comment

Previous Post Next Post