জ্বর সর্দি কাশির এন্টিবায়োটিক ঔষধের নামপ্রিয় পাঠক, উচ্চ রক্তচাপ কেন হয় আপনি কি এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। অথবা আপনি
কি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহি। তাহলে
আপনি এখন একদম সঠিক জায়গাতেই রয়েছেন। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে ভালোভাবে
জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
পাঠকবৃন্দ এই আর্টিকেলে শুধুমাত্র উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কেই নয় এছাড়াও আরো অনেক
বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি যদি বিস্তারিতভাবে জানতে চান তাহলে প্রতিটি
পয়েন্ট খুব মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ
- ভূমিকা
- উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে
- উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ
- তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
- কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত
- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন
- উচ্চ রক্তচাপে মধু
- উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
- শেষ কথা
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে,উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
ও কারণ তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়,উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে, উচ্চ
রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়, ব্যায়াম ইত্যাদি সম্পর্কে স্টেপ বাই স্টেপ
আলোচনা করেছি।
উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে
হৃদপিণ্ডের ধমনীতে রক্তের চাপ অনেক বেশি থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে বা
একে হাই প্রেসার বলে। এটাকে রেকর্ড করা হয় দুটি মনের মাধ্যমে ,যেটাতে কম
থাকে সেটাকে বলা হয় ডায়াস্টলিক, আর যেটাতে বেশি থাকে সেটা কে সিস্টোলিক।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ
রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ গুলো সম্পর্কে নিম্নে বলা হলো
- রক্ত চাপ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে মাত্রাতিরিক্ত লবণ খাওয়াই।
- অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে রক্ত চাপ বৃদ্ধি পায়।
- রাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ (৬-৮ ঘন্টা)ঘুম না হওয়ার কারণে।
- শরীরে অতিরিক্ত চর্বি ও ওজন বেড়ে যাওয়ায়।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়ার।
- অতিরিক্ত নেশাদ্রব্য অর্থাৎ মদ পান করায়।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ উচ্চ রক্তচাপের আলাদাভাবে বিশেষ কোনো লক্ষণ
পাওয়া যায় না। রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ আছে কি না সেটা পেশার মাপার যন্ত্র
দ্বারা বুঝা যায় । পেশার মাপার ক্ষেত্রে দুইটা জিনিস রেকর্ড করা হয়।
সিস্টোলিকঃ দুটি সংখ্যার মধ্যে বড় সংখ্যা কে বলা হয় সিস্টোলিক। সারা
শরীরে রক্ত সঞ্চা লোনের সময় হৃদপিণ্ড থেকে স্পন্দনের সময় যে চাপ মাপা হয়।
ডাস্টলিকঃ দুই সংখ্যার দ্বিতীয় সংখ্যাটির নাম হল ডায়াস্টোলিক।
রক্তনালীর বাধা থেকে রক্ত সঞ্চালনের বিরুদ্ধে এই চাপের সৃষ্টি। স্বাভাবিকভাবে
প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের প্রেসার ১২০/৮০ থেকে থাকে।( এখানে সিস্টোলিক ১২০
আর ডায়াস্টলিক৮০) মানুষের রক্তের চাপ একে অপরের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন হয়।
সেই ক্ষেত্রে যদি কারো রক্তচাপ১০০/৬০ থেকে১২০/৮০ এরম মধ্যে থেকে থাকে , তাহলে
ধরে নিতে হবে রক্তচাপ বা প্রেসার ঠিক আছে। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বলা হয় যদি
সব সময় ১৪০ / ৯০ বা এর চেয়ে বেশি থাকে তাহলে সেটা উচ্চ রক্তচাপ। সেক্ষেত্রে
চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়
- উচ্চ রক্তচাপ তাৎক্ষনিক ভাবে কমানোর উপায়গুলো নিম্নে বলা হলো
- হঠাৎ করে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায় সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয়
- তাৎক্ষণিকভাবে টক জাতীয় খাবার যেমন লেবু, তেতুল , আমড়া , চালতা ,ইত্যাদি খেতে হবে এতে উচ্চ রক্তচাপ আস্তে আস্তে স্বাভাবিকে আসবে।
- বাইরের খাবার অর্থাৎ ফাস্ট ফুড , তেলে ভাজাপোড়া ও বাইরের খাবারএড়িয়ে চলতে হবে হবে।
- পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে যথা টমেটো কিসমিস মিষ্টি আলু ,আলু বোখরা এগুলো যথারীতি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- দিনের ৩-৪ লিটার পানি পানি পান করলেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- চিনি ছাড়া লেবু চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেরাখতে সহায়তা করে।
- মানসিক চাপ বা চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- লাল বিটের রস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য এমন কিছু বিশেষ বিশেষ খাবার রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে
আপনি হয়তো অবগত নন। এ সকল খাবার আপনি হাতের কাছেই পেয়ে
যাবেন। এখন কথা হল কোন কোন খাবার গ্রহণ করবেন আপনি উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তাহলে চলুন এখন এই বিষয়ে সম্পর্কে জেনে নিন।
রক্তচাপ রোগের জন্য খাবারের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। সেগুলো নিম্নে
আলোচনা করা হলো।
- যেকোনো চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- খাদ্য তালিকায় পটাশিয়াম জাতীয় খাদ্য বাড়াতে হবে, যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- ডাবের পানি
- টমেটো
- শসার সালাদ
- বাদাম কালোজিরা
- রসুন
উপরে উল্লিখিত এই সকল খাবার আপনি গ্রহণ করার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
উচ্চরক্তচাপ কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়
- প্রতিদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করুন
- পরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন
- ক্ষুধা লাগলে খাবার খান আবার ক্ষুধা থাকতেই খাবারখাওয়া বন্ধ করুন
- দিনে কমপক্ষে চার-পাঁচ লিটার পানি পান করুন
- মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
- ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যতটা পারুল এড়িয়ে চলুন
- কাঁচা লবণ খাওয়া একেবারেই বন্ধ করুন
- শরীরের ওজনের ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ্য রাখুন
কোন বয়সে প্রেসার কত থাকা উচিত
মানুষের শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রেসার ১২০/৮০। বয়সের সাথে সাথে প্রেশারও
কিছু টা বাড়তে পারে, বেড়ে উপরেরটা অর্থাৎ সিস্টোলিক ১৪০ থেকে যদি বেশি
অন্যদিকে নিচেরটা অর্থাৎডায়াস্টলিক৯০ থেকে বেশি হলে সেটা কে উচ্চ রক্তচাপ বলা
হয়ে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ব্যায়াম
উচ্চ রক্ত কমানোর ক্ষেত্রে যে ব্যায়ামগুলো আপনি করতে পারেন প্রতিদিন
নিয়মিত আধা ঘন্টা হাটুন এতে আপনার শরীরের চর্বি কমে যাবে, যোগাসন , বেলি
মারা , শ্বাস প্রশ্বাস জোরে জোরে নেওয়া আবার ছাড়া, এছাড়া ও স্কোয়াট বা
প্ল্যাঙ্ক এর মত ব্যায়াম, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। নামাজ এমন একটি ব্যায়াম যা
শরীরের জন্য এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
অর্থাৎ শরীরে যে কোন রোগ জীবাণু প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করে। নামাযী
ব্যক্তিকে আল্লাহতালা বড় বড় রোগ থেকে নিরাপদে রাখেন। অর্থাৎ নামাজী
ব্যক্তিকে হাই প্রেসার, ডাইবেটিস , হার্টের রোগ , মেরুদন্ডের রোগ ,
পাকস্থলীর রোগ , লাঞ্চের রোগ , মস্তিষ্কের রোগ থেকে নিরাপদে রাখেন। (যদি সে
সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে)
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে লেবু
লেবুর মধ্যে অনেক গুণাগুণ রয়েছে এমন কিছু বিশেষ খনিজ পদার্থ রয়েছে যা
হাই প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে ।এর মধ্যে রয়েছে একটি
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রক্তের চাপকে দমিয়ে রাখতে সহায়তা করে। লেবু বা
লেবু জাতীয় ফল অর্থাৎ বাতাবি লেবু ,কমলালেবু, মাল্টা ইত্যাদি রক্তচাপকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন একটি অত্যন্ত উপকারী ঔষধ রসুনের মধ্যে এমন পদার্থ
আছে যার শরীরের মধ্যে গিয়ে রক্তকে তরল করে দেয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়
তাই আমাদের প্রতিদিন নিয়মিত এক থেকে দুই কোয়া রসুন খাওয়া উচিত।
উচ্চ রক্তচাপে মধু
মধু এমন একটি ঔষধ, যেই ঔষধ টি দুনিয়াতে যত ধরনের, যত রোগ রয়েছে সব রোগেরই
মহা ঔষধ। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, উচ্চ রক্তচাপেও এই ওষুধটি অত্যন্ত উপকারী।
অতএব আমাদের প্রতিদিন সকালে দুই চা চামচ করে মধু খাওয়া উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্নঃ উচ্চ রক্তচাপ থেকে কি কি হতে পারে?
উত্তরঃ উচ্চ রক্তচাপ থেকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
যেমনঃ
- হার্ট, ব্রেন এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- এওর্টা বা ধমনীর রোগ দেখা দিতে পারে
- ডিমেনশিয়া হতে পারে
প্রশ্নঃ উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ কি?
উত্তরঃ উচ্চ রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো হলো
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
- যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়া
- অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান করা
- অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়া
- কোমল পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা
- ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খাওয়ার অভ্যাস থাকা
- পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা
- ধূমপান করা
প্রশ্নঃ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ কত?
উত্তরঃ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০
মিমিপারদ।
প্রশ্নঃ স্বাভাবিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কতদিন লাগে?
উত্তরঃ স্বাভাবিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ১ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত
সময় লাগতে পারে।
প্রশ্নঃ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কি করা উচিত?
উত্তরঃ প্রতিদিন নিয়োমিত ব্যায়াম করা উচিত। আর তার সাথে সাথে একজন
ভালো ডাক্তারের সঠিক গাইডলাইন মেনে চলা উচিত।
প্রশ্নঃ রক্তচাপ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ রক্তচাপ সাধারণত ২ প্রকার। সেগুলো হলো
- সিস্টোলিক
- ডায়াস্টলিক
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনার জানতে পেরেছেন যে, উচ্চ
রক্তচাপ কাকে বলে, উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও লক্ষণ উচ্চ রক্ত কমানোর ঘরোয়া
উপায়। যদি আপনার কাছে এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে যারা উচ্চ রক্তচাপ
সম্পর্কে জানে না তাদের কাছে দয়া করে শেয়ার করে দিন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল
পেতেএই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Post a Comment